বড় ডাক্তারের চিকিৎসার চেয়ে নিজের চিকিৎসা যখন উত্তম
একজন বড় বা বিখ্যাত ডাক্তারের কাছে রোগী যায়, রোগ ভালো হয়ে যাবে এই আশা করেই। কিন্তু ভালো হবে দূরের কথা, ডাক্তারের চিকিৎসার প্রতি রোগীর ভরসাই হারিয়ে গেলো। কোন ডাক্তারের নাম বলতে চাই না। কারণ ডাক্তার ছাড়া আমাদের চলবে না। ডাক্তারের ছোটখাটো ভুলের জন্য অনেক রোগীরা কষ্ট ভোগ করে থাকে। শুধুমাত্র রোগীদের সচেতন করার জন্য এই লেখা।
একজন রোগী দীর্ঘ কয়েকমাস চরম গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছে।যেমন তেল, মশলাযুক্ত খাবার খাওয়ার পর প্রথমে তার পেট ভারী লাগে, তারপর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এজন্য রোগী ভাত নরম করে সিদ্ধ করে ভাতের জাউ খেতে থাকে।কিন্ত তারপরও তার শরীর খারাপ লাগে। শরীরের এই খারাপ অবস্থা দূর করার জন্য সে বড় ডাক্তারের কাছে যায়।
তারপর ডাক্তার রোগীকে কিছু খাওয়ার নিয়মকানুন বলে দেয় আর পরীক্ষা করতে দেয়। দ্বিতীয়বার পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে যখন ডাক্তার দেখান, তখন ডাক্তার রোগীকে পাঁচ রকমের ঔষুধ লিখে বলে, এই ঔষুধগুলো খেলে ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু ঔষুধগুলো খাওয়ার পর রোগীর চরম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। যেমন, সারা শরীর গ্যাস দিয়ে ভরে যাওয়া, পিঠ ভারী লাগা, বমি লাগা, শ্বাসকষ্ট, মাথাঘুরানো, হাত পা চরম দূর্বল লাগা আর নিদ্রাহীনতা। দুইদিন ঔষুধ খেয়ে তারপর দুইদিনের জন্য ঔষুধ খাওয়া বন্ধ রাখে। কিন্তু বন্ধ রাখার পরও একই রকম খারাপ লাগে। ঔষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানানোর জন্য রোগী আবার তৃতীয়বারের মতো ডাক্তারকে দেখালে ডাক্তার বলে, আপনাকে ৩টি ঔষুধ খেতে বলা হয়েছে, আপনি ৫টি খেয়েছেন, তাই খারাপ লেগেছে। রোগী তো শুনে অবাক!মনে মনে ডাক্তারকে অভিযোগ করছে, প্রেসক্রিপশনে তো তা বুঝিয়ে লেখা হয় নি।
কি আর করা। ডাক্তার তখন রোগীকে বলে, আগের ঔষুধ বাদ দিয়ে দিচ্ছি, নতুন ঔষুধ লিখে দিচ্ছি- এগুলো খেলে ভালো হয়ে যাবেন, আর কাগজে লেখা খাওয়ার নির্দেশগুলো মেনে চলবেন।এবার প্রেসক্রিপশনের লেখা রোগীর কাছে সহজই মনে হলো। রোগীর স্বজনরা এ বলে বুঝাচ্ছে - এবার ডাক্তার একদম সাধারণ ঔষুধ দিয়েছে। এই ঔষুধে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে না। স্বজনদের কথায় রোগী ডাক্তারের নতুন ঔষুধ খাওয়ার সাহস পেল। কিন্তু হায়রে! ঔষুধ খাওয়ার আধ ঘণ্টার মধ্যেই শুরু হয়ে গেল ঔষুধের আবারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এবার আর একটি নতুন উপসর্গ - জিহবা ভারী লাগা, শ্বাসকষ্ট তো আছেই, মাথা খারাপ লাগা। রোগী তো সম্পূর্ণ অস্থির। অস্থিরতা ভোগ করতে করতে রোগী শেষ পর্যন্ত ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার জিহবা ভারী লাগা, শ্বাসকষ্ট, অস্থিরতা। তারপর হাসপাতালে ফোন করে জানানো হলে ডাক্তারের অ্যাটেন্ড্যান্স ডাক্তার বলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে।অ্যাটেন্ড্যান্স ডাক্তারের কথা রোগীর পছন্দ হয় নি। রোগী তখন সিদ্ধান্ত নিল, আর এই বড় ডাক্তার নয়,কিছুদিন পর অন্য ডাক্তার দেখাবে। বড় ডাক্তারের প্রতি রোগী আস্থা হারিয়ে ফেলে।
অন্যদিকে রোগীর এক স্বজন(সাধারণ গৃহিণী) রোগীকে ফোন করে বলছে, "আমি তো তোমাকে আগে বলেছিলাম, আগের ঔষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এখনও শরীরে আছে।সুতরাং ডাক্তার নতুন করে ঔষুধ দিলেও এখন এই ঔষুধ খাবে না। অন্তত সাতদিন পার হউক। একসময়ে বড় ডাক্তারের ভুক্তভোগী রোগী ছিলাম। বড় ডাক্তাররা এত কিছু খেয়াল করে না।" একরকম পিছে পিছে বড় ডাক্তারকে সবাই বকাবকি করতে থাকে রোগীর অস্থির অবস্থা দেখে।তারপর রোগীকে সবাই পরামর্শ দিতে থাকে এ বলে,ঔষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিলেই ২/১ দিনের মধ্যেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। ঔষুধ বন্ধ করার পর রোগী এখন স্বাভাবিক অবস্থায় আছে।
আমার প্রশ্ন, ডাক্তার কেন বুঝতে পারলো না,রোগীর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামূলক অবস্থায় কোন নতুন ঔষুধ রোগীকে খেতে দেওয়া যাবে না।নাকি ডাক্তারের ঔষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। যদি ধারণা থাকে, তবে ডাক্তারের তো উচিত ঔষুধের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে রোগীকে সাবধান করা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন