তালাকের যত অসম্মানজনক আইন দূর হউক
তালাক শব্দটি সমাজে নেতিবাচক ও কষ্টকর ঘটনার সাক্ষী। বেশির ভাগ তালাক ঘটে রাগ ও ক্ষোভ থেকে।তালাকের পিছনে যদি কোন মানসম্মত ও যুক্তিসংগত কারণ না থাকে সেই তালাককে বলা যায় পৈশাচিক ও অমানবিক তালাক।
এই ধরণের তালাকের ফলে যে কোন এক পক্ষ মানসিক চাপের সম্মুখীন হয় ও চরম অসুস্থতার শিকারে পড়ে। তবে যে পক্ষ এই ধরণের অমানবিক তালাক প্রদান করে তাকে পশু তালাকদাতা বলাই সমীচীন হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তালাকের অসম্মানজনক আইন কোনটি? কোন এক পক্ষ অন্য পক্ষকে তালাকের নোটিশ পাঠানোর পর সিটি কর্পোরেশনের সালিশ কর্তৃপক্ষ উভয় পক্ষকে মিলানোর জন্য ২য় ও ৩য় বারের মতো নোটিশ প্রদান করেন সেই নোটিশই তালাকের জন্য অসম্মানজনক আইন।
কারণ উভয়পক্ষকে নোটিশ প্রদান করা ঠিক নয়, যে পক্ষ তালাক প্রদান করেছে শুধুমাত্র সেই পক্ষকেই নোটিশ পাঠানো উচিত আর তার কাছেই জবাবদিহি চাওয়া উচিত। আর যে পক্ষকে তালাক দিয়েছে সেই পক্ষের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত, তালাককে মানবিক তালাকে পরিণত করার জন্য।
ক্ষমা চাওয়ার কথা এই কারণে বললাম, কারণ তালাকপ্রদানকারী রাগের বশে অন্য পক্ষকে পূর্বাভাষ না দিয়ে যখন তালাক প্রদান করে সেটা হচ্ছে অমানবিক পশু তালাক। তালাক যাতে অন্য পক্ষের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি না করে সেজন্য ক্ষমা চাওয়ার কথা বলা হয়েছে সুন্দর আচরণের দৃষ্টান্ত হিসাবে।
আর একটু বিশ্লেষণ করে বলা হউক, ২য় ও ৩য় বারের মতো নোটিশ প্রদান কেন তালাকের অসম্মানজনক আইন। যে পক্ষ তালাক চায় না, হয়তো একদিন অন্য পক্ষের কাছ থেকে রাগ ও ক্ষোভ ভাংগার আশা করে ভালবাসা পাবার আশা করে, সে যদি হঠাৎ তালাকের নোটিশ পায় তার জন্য তালাক কাজটিই একটি অসম্মানজনক ও চরম মানসিক আঘাতজনিত কাজ।
যে পক্ষ অনাকাংখিত তালাক পায়, সে পক্ষের কাছে তালাকপ্রদানকারী এক সময়ের ভালোবাসার মানুষটি মূহুর্তেই হয়ে যায় ভয়ংকর এক ডাকাত, যে ডাকাতের চেহারা তালাক পাওয়া পক্ষটি দ্বিতীয়বার দেখতে চায় না মানসিক আঘাত সহ্য করতে না পারার ভয়ে।
যে পক্ষের কাছে প্রাথমিকভাবে তালাকের নোটিশ পাওয়াটা একটি অসম্মানজনক ও অপমানিত কাজ মনে হয়, তার কাছে তো প্রশ্নই উঠে না সালিশ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ২য় ও ৩য় নোটিশে তালাকপ্রদানকারী পক্ষের সাথে দেখা করা। কারণ তালাক পাওয়া পক্ষ ইতিমধ্যেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
এই কারণেই বলছি সুন্দর সমাজ, পরিবার, রাষ্ট্র গঠনের জন্য সমাজ থেকে অমানবিক তালাক দূর করা উচিত। আর এই অমানবিক তালাক দূর করার জন্য প্রাথমিকভাবে তালাকের নোটিশ দেয়ার আগেই সালিশ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে সমঝোতার নোটিশ প্রদান করবে। আর এই নোটিশ প্রদানকে অবশ্যই বাধ্যতামূলক করতে হবে, আর যদি কেউ না করে তবে তালাক কার্যকর হবে না।
আসল কথা হচ্ছে, মানবিক তালাক কার্যকর বা বাতিল করার জন্য, তালাক নোটিশ প্রদানের পরে নয়, নোটিশ প্রদানের আগেই সালিশ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে উভয়পক্ষকে সমঝোতামূলক বৈঠকে বসা উচিত।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন