বয়ঃসন্ধিকালের ভয়ংকর সময় স্বাভাবিক করার উপায়
বয়ঃসন্ধিকালের সময়টাকে ভয়ংকর বলার কারণ এই সময়টাতে সারা বিশ্বে বেশ কিছু কিশোর কিশোরীরা মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়। কিন্তু কেন? এই রোগ হবার পিছনে এক একজনের বেলায় এক এক রকম কারণ থাকতে পারে। কিন্তু মূল কারন একটি। সেটি হচ্ছে ভালোবাসার অভাব।
অনেক বাবা মা বলতে পারে, আমরা সারাদিন কত পরিশ্রম করি সেটা তো সন্তানকে ভালোবাসি বলেই।অনেক মা বলতে পারে, বাচ্চাদেরকে মজার মজার রান্না করে খাওয়াই, স্কুলে আনা নেওয়া করি, সারাদিন বাচ্চার সেবা করি- ভালোবাসি বলেই বাচ্চাদের জন্য এতো পরিশ্রম করি। কিন্তু না, বাচ্চাদের জন্য পরিশ্রম করার নামই ভালোবাসা নয়। যদি সেই পরিশ্রমে গলদ থাকে, তাহলে সেই পরিশ্রম ভালোবাসার চিহ্ন হতে পারে না।যেমন বাবা মা যদি তার বাচ্চাকে পড়ানোর সময় ইচ্ছামতো ধমকায়, মারধর করে বা পড়া আদায় করার জন্য বাচ্চাকে হয়রানি করে স্বাভাবিকভাবেই সেই বাচ্চা বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাবা মায়ের অবাধ্য হতে থাকবে।
বাচ্চার বয়স যখন ৭/৮ বছর থাকে তখন সে বাবা মায়ের অত্যাচার নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করে ঠিকই কিন্তু বাচ্চার অন্তরে বাবা মায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জন্মাতে থাকে। আর বাচ্চারা তাদের এই ক্ষোভ প্রকাশ করে তাদের কৈশোরে। কারণ কৈশোরে তাদের প্রতিবাদ জ্ঞান বিকশিত হয়।
বাবা মা বুঝতে ও পারে না তার সন্তানটি বাবমায়ের ভালোবাসার অভাব অনুভব করছে ও আচার আচরণে বাবা মায়ের অবহেলার শিকার।ছোটবেলা থেকে অবহেলা পেতে পেতে সন্তানটি কৈশোরে এসে বাবা মায়ের প্রতি অবাধ্যতা প্রকাশ করে। এসময়ে সন্তান তখন বুঝতে পারে, বাবা মা তার প্রতি অন্যায় করেছে।তাই সে আর কথা শুনতে চায় না। সন্তান কথা না শুনার পিছনে বাবামায়ের দোষ, সন্তানের নয়।
এমনিতেই বয়ঃসন্ধিকাল সময়টি একটি ভয়ঃকর সময়। এ সময়ে কিশোর কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। এ সময তারা তাদের নিজেদের মনগড়া ভুল চিন্তাকেই সঠিক মনে করে আর বাবা মায়ের উপদেশকে ভুল মনে করে। কারণ তারা তো বাবা মায়ের কাছ থেকে রাগ জিদ করা ছাড়া ভালো কিছু শিখে নি।
তাই প্রতিটি বাবা মায়ের কাছে এই বার্তা পাঠানো উচিত, জন্ম থেকেই সন্তানকে ভালোবেসে মানুষ করো যদি সন্তানকে বাবা মায়ের বাধ্য বানাতে চাও। যে সমস্ত কিশোর সন্তানেরা বাবা মায়ের অবাধ্য হয় তারাই মনগড়া এলোমেলো চলতে চলতে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অথচ কৈশোরকালীন সময়ে কিশোর কিশোরীদের জন্য বাবামায়ের সঠিক উপদেশ শুনা খুবই জরুরী। কারণ এ সময়ে জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে তাদের ধারণা একদম নেই বললেই চলে। জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে বাবা মা এর কথা না শুনার জন্য ছোটবেলা থেকেই সন্তানের প্রতি বাবা মায়ের অবহেলা দায়ী।
সবশেষ একটি ইতিবাচক কথা বলা দরকার, যে সমস্ত বাবা মায়েরা সন্তানকে ছোট থেকে মানে জন্ম থেকে ভালোবেসে মানুষ করে, এখানে বাবা মা যদি সন্তানের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ নাও করতে পারে, সেই সন্তানেরা কখনো বাবা মায়ের অবাধ্য হয় না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন