'প্যারেন্টিং' বিষয় চালু হউক, বৃদ্ধাশ্রম দূর হউক
বাবা মা আর সন্তানের মাঝে খারাপ সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রম।বৃদ্ধ বয়সে কোন বাবা মাকে যাতে বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে না হয় এবং বাবা মা ও সন্তানের মাঝে সুন্দর সম্পর্ক তৈরির শিক্ষা লাভের জন্য প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অর্থাৎ প্রথম থেকে মাস্টার্স শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক হিসাবে ' প্যারেন্টিং' বিষয় চালু করা উচিত।
বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখার পিছনে আসল অপরাধী কে - বাবা মা নাকি সন্তান।বাবা মা আর সন্তানের মধ্যে বড় কে? নিশ্চয়ই বাবা মা। সুতরাং বয়সে যারা বড় তারাই তো সন্তানদেরকে শিখাবে জীবনের আদর্শ। এর মানে বাবা মায়ের কাছ থেকেই তো সন্তানেরা জীবনের আদর্শ শিখে।
যে সমস্ত বাবা মায়েরা সন্তানদেরকে আদর্শ শিক্ষায় মানুষ করতে পারে নি সে সমস্ত বাবা মায়ের সন্তানেরাই তাদের বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখতে পছন্দ করে। আর যে সমস্ত বাবা মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে আদর্শ শিক্ষায় মানুষ করতে পেরেছে, সে সমস্ত সন্তানেরা শত কষ্টের মাঝেও বাবা মাকে নিজের কাছে রাখতে পছন্দ করে এবং বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখাটা তাদের কাছে পাপকাজ ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না।
এখানে আদর্শ শিক্ষা বলতে উচ্চশিক্ষাকে বুঝানো হয় নি। আদর্শ শিক্ষা বলতে মানবিক শিক্ষাকে বুঝানো হয়েছে। এই মানবিক শিক্ষায় বাবা মায়ের প্রতি সন্তানের ভক্তি, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা থাকে। এই শিক্ষাটা বস্তির পরিবেশেও থাকতে পারে যদি বাবা মা আর সন্তানের মাঝে ভালোবাসা থাকে।
বৃদ্ধ বাবা মা তো হঠাৎ করে বৃদ্ধ হয়ে যায় নি। তারা তো তরুণ ছিল, ছেলেমেয়েরা ছোট ছিল।তরুণ বাবা মা তখন তাদের ছেলেমেয়েদের সাথে কি ধরণের আচরণ করেছে সেটাই এখন দেখার বিষয়। হয়তো দেখা গেছে তরুণ মা বাবা তাদের ছেলেমেয়েদেরকে মজার মজার খাবার খাওয়াইছে, দামী দামী পোষাক কিনে দিয়েছে, দামী স্কুলে পড়িয়েছে কিন্তু সন্তানের সাথে তাদের আচার আচরণে কোন ভালোবাসা, আন্তরিকতার চিহ্ন ছিল না।
আমরা রাজনীতিতে দেখতে পাই জনগণ যখন তাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় তখন বিদ্রোহ ঘোষণা করে।কিন্তু সন্তান যখন বাবা মায়ের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য বিদ্রোহ ঘোষণা করে সেই বিদ্রোহের বার্তা বাবা মা বুঝতেও পারে না আর সন্তানের ও আর ভালোবাসা পাওয়া হয় না। ভালোবাসা ছাড়াই খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা,বাসস্থানের মত মৌলিক চাহিদা পূরণ করে বাবা মা সন্তান বড় করে। এ সমস্ত বাহ্যিক গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা পূরণ করাকেই বাবা মা ভালোবাসা মনে করে। সন্তানের সাথে বাবা মায়ের যে আন্তরিক সম্পর্ক থাকতে হয় তা অনেক বাবা ম বুঝেন না। তাই বাবা মা ও সন্তানের মাঝে দুরত্ব বাড়তে থাকে।
ছোটবেলায় যেমন বাবা মা শাসনের নামে সন্তানের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায় তেমনি নিরাপত্তার নামে প্রতিষ্ঠিত সন্তান বৃদ্ধ বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায়।
আসলে বাবা মায়ের দোষ দিয়ে লাভ নেই।কারণ তারা বুঝতে পারে না কখন কিভাবে কেমন আচরণ করা উচিৎ সন্তানের সাথে। অনেক বাবা মা মনে করে শুধুমাত্র শাসন করলেই সন্তান মানুষ হবে। আসলে প্রথমে ভালোবাসতে হয় তারপর শাসন করতে হয়।
উদাহরনসরূপ বলা যায় যেসব বাবা মায়েরা ছোটবেলায় সন্তানদেরকে ধমকের সুরে পড়ার কথা বলে সে সমস্ত সন্তানের মনে বাবা মায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জন্মাতে থাকে এবং ধীরে ধীরে তারা অবাধ্য হয়ে যায়।একবার অবাধ্য হয়ে গেলে সেসব সন্তান আর বাধ্য হয় না।এ কারণে বলা হয় যে সমস্ত বাবা মা জন্ম থেকে কিশোর বয়স পর্যন্ত সন্তানদেরকে ভালোবাসার সুরে পরিচালনা করতে পারে সেসব সন্তান কখনো অবাধ্য হয় না। তারা জীবন দিয়ে হলেও বৃদ্ধ বাবা মাকে নিজের কাছে রেখে বাবা মায়ের দায়িত্ব পালন করবে।
আর তাই বাব মা ও সন্তানের মাঝে সুন্দর সম্পর্ক বজায় থাকার জন্য প্রথম শ্রেণি থেকে মাস্টার্স শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক হিসাবে 'প্যারেন্টিং' বিষয় চালু করা উচিত।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন