মানসিক রোগীদের চিকিৎসা হউক কর্মমুখর

  মানসিক রোগীদের চিকিৎসা হউক  কর্মমুখর  -  এর মানে রোগীদেরকে কাজ দিয়ে চিকিৎসা  করা হউক। রোগী যদি হয় ছাত্র তবে তাকে  যতটুকু পারে ততটুক পড়াশোনায় ব‍্যস্ত রেখে চিকিৎসা করা হউক। কর্মবিমুখ চিকিৎসার ফলে রোগীরা সারাজীবন কর্মহীন, প্রাণহীন জীবনযাপন করে।

 মানসিক ডাক্তারদের প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি রেখেই আমি এই কথাগুলো বলছি।কারণ ডাক্তারদের চিকিৎসায় অনেক মানসিক রোগীরাই সুস্থ হচ্ছে। মানসিক ডাক্তার না থাকলে হয়তো অনেক রোগী হয় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতো না হয়  প্রতিবন্ধী জীবনযাপন করতো।

আমি বলছি মানসিক হাসপাতালে ভর্তিকৃত মানসিক রোগীদের কথা। যে সমস্ত মানসিক রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় সেই সমস্ত রোগীদের মানসিক অবস্থা জটিল বলেই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়।আর অভিভাবকেরা মানসিক রোগে আক্রান্ত সন্তানকে সামলাতে পারে না বলেই হাসপাতালে ভর্তি করায়।

এখন প্রশ্ন  হচ্ছে কারা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি  হচ্ছে? তাদের  আর্থিক, শিক্ষাগত অবস্থা কেমন? কেমন তাদের মানসিক সমস‍্যা? কোন ধরণের মানসিক হাসপাতালে তারা ভর্তি হচ্ছে? সরকারী নাকি বেসরকারী? ইত‍্যাদি নানা প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা দরকার।

উত্তরে বলা যায় বেশির ভাগ তরুণ মানসিক রোগীরাই মানসিক  হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।  তাদের আর্থিক  অবস্থা ভালো ও তারা শিক্ষিত।তাদের মানসিক সমস‍্যা হচ্ছে তারা অধিক উত্তেজিত হয়ে ঘরে ভাংচুরের কার্যকলাপ ঘটায়  এবং ঘরে বিশৃংখল অবস্থার সৃষ্টি করে যা ঘরের মানুষের জন‍্য খুবই যন্ত্রণাদায়ক। যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো তাদেরকে বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আর যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না, তাদের তো সরকারি হাসপাতাল ছাড়া উপায় নেই। 

এখন কথা হচ্ছে এক সময়ের সুস্থ, কর্মমুখর মানুষগুলোই কিন্তু কোন না ঘটনার শিকার হয়ে চরম  মানসিক রোগীতে পরিণত হচ্ছে এবং হাসপাতালে রেখে তাদের চিকিৎসা করতে হচ্ছে। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে  এসব রোগীদের যদি আগের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে না পারি তবে চিকিৎসার সার্থকতা কোথায়?  বেশির ভাগ রোগীরাই উত্তেজনাকর সমস‍্যা  ও কিছুটা এলোমেলো চিন্তাভাবনার সমস‍্যা নিয়ে ভর্তি হচ্ছে।  কিন্তু তাই বলে কি এরকম, তারা কোন কাজ করতে পারবে না।   কাজ ছাড়া কি মানুষের ব্রেইন সুস্থ থাকতে পারে?  অথচ  দিনের পর দিন, মাসের পর মাস মানসিক  হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীকে কর্মহীন চিকিৎসা দেওয়াকে কি সুস্থ চিকিৎসা বলা যায়? 

যেই রোগী সুস্থ অবস্থায় যে ভালো কাজে ব‍্যস্ত ছিল তাকে সেই কাজে ব‍্যস্ত রেখেই চিকিৎসা করা উচিত।  অথচ চিকিৎসকরা কি করে? রোগীর উত্তেজনা  কম  ও চিন্তাধারা  মোটামুটি স্বাভাবিক হলেই  ডাক্তাররা হাসপাতাল ছেড়ে বাসায় যাওয়ার অনুমতি দেয়।  অভিভাবকেরা তো আশা করে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ছাড়া পাওয়া সন্তানটি বাসায় এসে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারবে। কিন্তু পারে না। এই কারণেই হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীর চিকিৎসা  কর্মময় করার কথা বলা হচ্ছে। 

অথচ দিনের পর দিন, মাসের পর মাস হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের সময় কাটে  খেয়ে, ঘুমিয়ে, টিভি দেখে আর ডাক্তারদের পর্যবেক্ষণে থেকে।মানসিক রোগীরা কিন্তু সচেতন। শুধুমাত্র মানসিক রোগের কারণে তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না। দৈহিক রোগের মতই কিন্তু মানসিক রোগ একটি রোগ। তারা কিন্তু তাদের বাস্তব জীবন নিয়ে হতাশায় ভুগে। বাস্তব জীবনের আরেক  নাম কিন্তু কাজ।  অথচ  হাসপাতালের কাজ বঞ্চিত   চিকিৎসার পর মানসিক রোগীরা   তাদের কাজে ফিরতে না পেরে  কর্মহীন, হতাশাময় জীবনযাপন করছে।



মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ