স্ত্রী, সন্তানের জন্য স্বামীর আয়ের শতকরা 10 ভাগ বরাদ্দ থাকা উচিত
আমরা স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশ পেলেও স্বপ্নের স্বাধীন ঘর কেন পাই না।আমরা সবাই স্বপ্ন দেখি সুন্দর একটি স্বাধীন ঘরের। সেই স্বপ্ন কি সবার পূরণ হয়? ঘরে ঘরে দেখা যায় তুলনামূলক সবল সদস্য দ্বারা দূর্বল সদস্যদের অত্যাচারিত, নির্যাতিত, শোষিত হওয়ার চিত্র। অনেকে হয়তো বলবে এই সমস্ত অত্যাচারের সমাধান হচ্ছে, " মেয়েরা নিজের পায়ে দাঁড়াও।"কিন্তু যেসব স্বামীরা দায়িত্বহীন তাদের স্ত্রী যদি চাকরী করে তারা তখন 100 ভাগ দায়িত্বহীন হয়ে যায়। তাই বলে তো আর মেয়েরা চাকরি করা থামাবে না।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ঘর বা পরিবারের ভিত্তি কোনটা? ঘরকে আমরা সংসার, পরিবার বলতে পারি। যাই হোক যুগে যুগে ঘর গঠিত হয়ে আসছে স্বামী স্ত্রীর বন্ধন দিয়ে। অথচ নবদম্পতী ও পুরানো দম্পতির সংসারে স্ত্রীর উপর স্বামীর নির্যাতন চলে।এই নির্যাতন হয় শারীরিক, না হয় মানসিক।
শারীরিক নির্যাতন দেখা যায়, কিন্তু মানসিক নির্যাতন তো দেখা যায় না। ঘরে ঘরে মানসিক নির্যাতন চলছে স্ত্রী, সন্তানের উপর।
আর মানসিক নির্যাতন হচ্ছে স্ত্রীর অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অবহেলা করা যার ফলে এ সমস্ত চাহিদা মিটানোর জন্য স্ত্রীকে বাপের বাড়ির কাছে হাত পাততে হয়। এ সমস্ত অসাধু স্বামীরা শুধু স্ত্রী নয়, স্ত্রীর সাথে তারা সন্তানের দায়িত্বও অবহেলা করে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে অসাধু স্বামীর অন্তরে তো সরকার স্ত্রী, সন্তানের প্রতি ভালোবাসা তৈরি করে দিতে পারবে না।সরকার যে কাজটা করতে পারবে সেটি হচ্ছে আইন তৈরি করা। খারাপ মানুষের স্বভাব নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন তৈরি করতে হয়।
সরকার শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য যেমন ভিটামিন ক্যাপসূল , টিকা প্রদান করে তেমনি সুন্দর পরিবার তৈরির জন্য আইন তৈরি করা উচিত। স্বামী স্ত্রী, সন্তান নিয়ে তো একটি পরিবার।স্ত্রী সন্তানের দায়িত্ব সঠিকডাবে পালন করার জন্য স্বামীরা আয় করে। কিন্তু না, বেশির ডাগ পরিবারে দেখা যাচ্ছে স্বামীর যথেষ্ট আয় থাকা সত্তেও স্ত্রী সন্তানের মৌলিক চাহিদা মিটানোর মত দায়িত্ব অবহেলা করে যাচ্ছে। সন্তানের দায়িত্ব অবহেলা করা যে নিজের ক্ষতি করা সেটা পিতা হয়ে বুঝতে চায় না। ভালো আয়ের পিতা যখন সন্তানের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে না তখন এর মানে কি দাঁড়ায়। এর মানে হচ্ছে সে চায় তার স্ত্রী বাপের বাড়ি থেকে টাকা এনে সন্তানের চাহিদা মিটাক। এভাবেই ঘরে ঘরে স্বামীরা স্ত্রী সন্তানের প্রতি দায়িত্ব অবহেলা করে নীরব যৌতুকের অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে।
ঘরে ঘরে চলছে স্ত্রী সন্তানের প্রতি শোষণ, নির্যাতন। তাই এ নির্যাতন বন্ধের জন্য সরকারের একটি আইন তৈরি করা উচিত। আইনটি হচ্ছে স্বামীর আয়ের শতকরা দশ ভাগ পাবে স্ত্রী সন্তান আলাদা করে। যদি স্বামীর আয় হয় এক লাখ টাকা, স্ত্রী মাসিক খরচ পাবে দশ হাজার টাকা, একজন সন্তানের মাসিক খরচ হবে 10 হাজার টাকা, দুইজন সন্তানের মাসিক খরচ হবে 20 হাজার টাকা।এভাবে যেসব স্বামীর আয় 30 হাজার টাকা স্ত্রী, সন্তানের জন্য তার মাসিক খরচ বরাদ্দ থাকবে তিন হাজার টাকা করে।
স্ত্রী, সন্তানের প্রতি শোষণ, নির্যাতন বন্ধের জন্য দ্রুত শতকরা 10 ভাগ বেতন বরাদ্দের আইন চালু করা উচিত।তবে যেসব স্বামী, পিতার স্ত্রী সন্তানের প্রতি ভালোবাসা আছে তাদের জন্য এই আইনের দরকার হয় না। কারণ ভালো স্বামী, পিতারা স্ত্রী, সন্তানের ভালোর জন্য পারলে বেতনের পুরোটাই খরচ করে।তবে আইন তো আইন।আইন যখন তৈরি হবে তখন সেটা ভালো মন্দ সবার জন্যই হবে।
এক কাজের বুয়া বলছে, সে কয়েক লাখ টাকা খরচ করে মেয়ে বিয়ে দিয়েছে। এখন মা বোনের পরামর্শে মেয়ের জামাই মেয়েকে মারধর করে। শ্বশুরবাড়িতে মেয়েটির অবস্থা কাজের মেয়ের মতো, কাজ করার বিনিময়ে মেয়েটিকে কোনমতে খেতে দেওয়া হয়। তার অন্য কোন চাহিদা মেটানো হয় না। মেয়েকে মায়ের সাথে কথা বলতে দেয় না। যখন কথা বলে সবার সামনে ফোনের শব্দ বাড়িয়ে দিয়ে কথা বলতে হয়। অর্থাৎ ফোনে কথা বলার স্বাধীনতা মেয়ের নেই। এই ধরণের সমস্যা দূর করার জন্য স্বামীর আয়ের শতকরা 10 ভাগ বরাদ্দের আইনটি খুবই উপকারী হবে।
নাছরীন আক্তার
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন